
বিস্তারিত
বাছবিচার ছাড়াই মামলা, সঠিক বিচার পাওয়ার শঙ্কা ফ্যাসিবাদের চক্রান্ত থেমে নেই: আসিফ মাহমুদ রেকর্ড ছাড়াল স্বর্ণের দাম, আজ থেকে কার্যকর সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ূন গ্রেপ্তার রাজধানীতে বৃষ্টি, পূর্বাভাসে যা জানালো আবহাওয়া অফিস বিল ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূসের কুশল বিনিময় জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত সংবর্ধনায় ড. ইউনূস মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে রুহুল আমিন গাজী ছিলেন বলিষ্ঠ: তারেক রহমান ফ্যাসিষ্ট সরকারের রক্তচক্ষুর কাছে মাথানত করেননি রুহুল আমিন গাজী: মির্জা ফখরুল সাংবাদিক রহুল আমিন গাজীর মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের শোক দুই জেলায় বজ্রপাতে ঝরল ৫ প্রাণ বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী আর নেই এইচএসসির বাতিল হওয়া পরীক্ষার টাকা ফেরত পাবেন শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বাইডেনের ‘পূর্ণ সমর্থন’ কক্সবাজারে সেনা অফিসার নিহতের ঘটনায় তারেক রহমানের শোক বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস বাংলাদেশিদের ধাওয়া করে গ্রামে ঢুকে পড়ে দুই বিএসএফ সদস্য ট্রুডোর কাছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও ভিসা দেয়ার অনুরোধ ড. ইউনূসের আরও ৮০১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ৩ স্বামীর হাত-পা-চোখ বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ, তিনজনের যাবজ্জীবন
বাছবিচার ছাড়াই মামলা, সঠিক বিচার পাওয়ার শঙ্কা
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্বে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হতাহতের ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক, তারকা প্রায় সব শ্রেণির ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাছবিচার ছাড়াই মামলা হচ্ছে।
কয়েকটি চক্র আবার মামলাবাণিজ্যে মেতেছে।
তাদের লক্ষ্যই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কর্ণধাররা। মামলায় আসামি না করার জন্য তাদের কাছে দাবি করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। দাবি করা টাকা না দিলেই দেওয়া হচ্ছে একের পর এক মামলা। বাছবিচার ছাড়াই নির্বিচারে মামলাগুলোয় আসামি করা হচ্ছে।
ফলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও পূর্বশত্রুতার জেরে মামলার আসামি করারও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদী চেনেন না আসামিকে আর আসামি চেনেন না বাদীকে। এমনকি ঢাকার ঘটনার মামলায় আসামি করা হয়েছে ঢাকার বাইরের জেলার শত শত মানুষকে। এ ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ মামলা প্রকৃত ভুক্তভোগীদের সঠিক বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের বাইরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না।
তিনি বলেন, ‘যখন ঢাকার ঘটনায় রাজশাহী, রংপুর আর লালমনিরহাট থেকে ১০০-১৫০ মানুষ আসামি হবে, তখন খুব সহজেই অনুমান করা যায় এগুলো বানোয়াট মামলা। এগুলো শুধু হেনস্তার জন্য করা হয়েছে। রংপুর থেকে ১০০ জন মানুষ ঢাকায় এসে একজনকে খুন করবে না। যেখানে লোক মারা গেছে পুলিশের গুলিতে। এগুলো স্ক্রিপ্টেট (সাজানো)। কেউ একজন লিখে দিচ্ছে, সেগুলো থানায় থানায় চলছে। ব্যবসায়ীরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এক নম্বর আসামি শেখ হাসিনা, দুই নম্বর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং এরপর অমুক এলাকার ২০০ লোক! এগুলো কিছু হলো! এ ধরনের মামলাগুলো করাই হয় প্রকৃত অপরাধীদের বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য। ’
যাদের হেনস্তার উদ্দেশ্যে এসব মামলায় নাম দেওয়া হয়, তাদের উদ্দেশ্য করে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘আমাকে এভাবে হেনস্তা করার জন্য কেউ মামলায় আসামি করলে আমি তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানি মামলা করতাম। ’
সম্প্রতি সুপরিচিত একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর কর্ণধারসহ প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে তিন কোটি টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনায় হওয়া মামলায় আসামি করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। আইনজীবী পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, তাদের সঙ্গে আরও অনেকেই আছেন, যারা খুবই প্রভাবশালী। পুরো অর্থ না দিলে মামলা হয়ে যাবে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির কর্ণধারের বিরুদ্ধে। হুমকিদাতা ওই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে একটি বাসায় নিয়ে দেন-দরবার চালিয়ে টাকা আদায়ে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা না পেয়ে আদালতের মাধ্যমে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা ঠুকে দেয়। এখানেই থেমে থাকেনি ওই চক্র।
কিছুদিন পর আবারও টাকার জন্য চাপ দিয়ে জানায়, চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে নতুন করে আরও মামলা দেওয়া হবে। সেই টাকা না পেয়ে পল্টন থানায় আরও একটি হত্যা মামলা করা হয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির কর্ণধারের বিরুদ্ধে। অথচ এই ব্যবসায়ী কখনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এ ঘটনার মতোই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর মামলাকে হাতিয়ার বানিয়ে কয়েকটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। অনেকে বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না। যারা গত সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেননি, তারাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, প্রতারক চক্র মামলা-বাণিজ্য করছে, তা সত্য। নিরপরাধ ব্যবসায়ী ও লোকজনদের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ এসেছে। এসব বিষয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, ‘প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক আছি। একটি চক্র অর্থ না পেয়ে মামলা দিচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। তাদের বিষয়টি আমরা নজরদারি করছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী ও নিরীহ লোকজনকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত শুরু হয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো মামলার এজাহারে নাম থাকলেই যে গ্রেপ্তার করতে হবে, আইনে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তদন্ত শেষে তারপর গ্রেপ্তারের বিষয়টি আসে। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে না, তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে। ’