সাভারে ২১৯ পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা।

বিস্তারিতঃ

 

টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন। আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পোশাক শিল্পে বেশ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিল্প উদ্যোক্তারা কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হন। এর মধ্যে বন্ধ কারখানার সংখ্যা ১শর কাছাকাছি ছিল। যৌথবাহিনীর অভিযানের সিদ্ধান্তের পর তাদের তৎপরতায় বন্ধ কারখানার সংখ্যা অনেকটাই কমে আসে। তবে বৃহস্পতিবার বন্ধ কারখানার সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ২১৯টিতে, যা আগের দিন বুধবার ছিল ২৬টি। অর্থাৎ বন্ধ কারখানার সংখ্যা বেড়েছে ৮ গুনের বেশি। এদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতেও বৃহস্পতিবার দুটি কারখানায় বিক্ষোভ হয়েছে। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

আশুলিয়া : জানা যায়, শ্রমিকদের বেতন, হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের আন্দোলনের মুখে আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুরসহ আশপাশের অন্তত ২১৯টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৩৩টি কারখানা সাধারণ ছুটি ও ৮৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে বৃহস্পতিবার কোথাও সড়ক অবরোধ বা বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানাসহ ঢাকা ইপিজেডের কারখানাগুলো চালু রয়েছে।

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা কারখানার মধ্যে রয়েছে-ভার্চুয়াল বটয়ম, মন্ডল নিটওয়্যারস, সিগমা ফ্যাশনস, হা-মীম গ্রুপ, ক্রশওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ, জিন্স প্রোডিউসার লি., অরুনিমা স্পোর্টসওয়্যার, ডিএমসি এ্যাপারেলস, এস এম নিটওয়্যারস, আগামী এ্যাপারেলস, মানতা এ্যাপারেলসসহ অন্তত ৮৬টি পোশাক কারখানা।

শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য আমরা মালিক পক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি। তারা দীর্ঘদিন ধরে কালক্ষেপণ করে আসছিলেন। শ্রমিকরা প্রতিকার না পেয়ে কর্মবিরতি পালন করে আন্দোলনে অংশ নেয়। আন্দোলনের সপ্তাহখানেক পর কিছু কারখানার মালিক শ্রমিকদের দাবি মেনে নেন। অন্যান্য কারখানার মালিক দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করছেন না। এতে শ্রমিকরা আরও ক্ষুব্ধ হয়। ফলে ওই কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে পৌঁছে কর্মবিরতি পালন করে। বাধ্য হয়ে এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। তারা আরো বলেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য যেসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে এর মধ্যে বেশিরভাগ কারখানার শ্রমিকদের গত মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি।

 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার বন্ধ কারখানার সংখ্যা বেড়ে অন্তত আট গুণে এসেছে। ফলে শ্রমিক অসন্তোষের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে-এটা বলা যায়। শিল্পপাড়ায় স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জরুরি মালিক ও শ্রমিকদের গঠনমূলক আলোচনা। আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। এছাড়া কারখানা বন্ধ ঘোষণা একটি সাময়িক সমাধান।

শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, সকালে বেশকিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কর্মবিরতি পালন করে। এর ফলে এসব কারখানা কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণা করে। পাশাপাশি শ্রম আইন ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কিছু কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার ২১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। শিল্পাঞ্চলে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সাথে শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে আশুলিয়ার সব কারখানায় শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। বুধবার সন্ধ্যায় আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় এক শ্রমিক সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কিছু উসকানিদাতা লোক শ্রমিকদের উসকে দিয়ে গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে, যাতে মালিকদের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে তিনি শ্রমিকদের স্ব স্ব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন।

শ্রমিক সমাবেশে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, আল মুসলিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেওয়ান মঈনউদ্দিন বিপ্লব, আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর মিয়া বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *